জমকালো আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো নাঃগঞ্জ কলেজের নবীন-বরন অনুষ্ঠান
শহর প্রতিবেদক,নারায়ণগঞ্জ প্রতিদিন ডট কম : নারায়ণগঞ্জের এতীহ্যবাহি কলেজ নারায়ণগঞ্জ বিশ^বিদ্যালয় কলেজের নবীন-বরন অনুষ্ঠাটি জমকালো আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ¦ একে এম সেলিম ওসমান এমপি।
নারায়ণগঞ্জ কলেজের নবীন বরণ অনুষ্ঠান- ২০১৫ উপলক্ষে সোমবার সকালে এক মনোরম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি আবু হাসনাত মোঃ শহীদ বাদল এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ এ কে এম সেলিম ওসমান। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ সহধর্মীনি এবং বিশিষ্ট সমাজ সেবিকা বেগম নাসরিন ওসমান, জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সভানেত্রী শামীম আরা ও বিকেএমইএ’র সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেলিম ওসমান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, শুধু লেখাপড়া করলেই বড় হওয়া যায় না। এর পাশাপাশি নিয়মিত খেলাধুলা ও ধর্মীয় কাজ কর্মও ঠিক ভাবে পালন করতে হবে। নারায়ণগঞ্জের কলেজ গুলোতে অনেক প্রতিভাবান শিক্ষার্থী রয়েছে। যারা নাচ, গান, নৃত্য, বিতর্ক প্রতিযোগীতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শী। কিন্তু সহযোগীতার অভাবে তারা তাদের এই প্রতিভা গুলোকে প্রকাশ করতে পারছে না। এদের নিয়েই আমি একটি অনুষ্ঠান করতে চাই। যেখানে বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ গ্রহণ করবে। সেখান থেকেই বেরিয়ে আসবে এক একজন আইডল। যারা নারায়ণগঞ্জের আইডল হিসেবে দেশব্যপী সুনাম অর্জন করবে। তোমারাই হবে আধুনিক নারায়ণগঞ্জ গড়ার কারিগর। তোমাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর অপূর্ণ কাজ গুলো পূরণ করার চেষ্টা করব।
এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে মজা করে বলেন, আজকাল ছেলেরা মাদক খায় দুটি কারণে। এক হলো বেকারত্বের শিকার হলে, আর প্রেমে ছেঁকা খেলে। সুতরাং মেয়েরা, তোমরা ছেলেদের আশা দিয়ে তাদের মন ভেঙে দিওনা। আর ছেলেরা মেয়েদের প্রস্তাব দেয়ার আগে নিজের পজিশন ঠিক করে নিও। ভালো চাকরিতে যোগ দিয়ে এরপর এ পথে পা দিও। বর্তমানে দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিরোধী দলীয় নেত্রী, মাননীয় স্পীকারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের অবস্থান অনেক উন্নত। এই অনুষ্ঠানে আসার পর কলেজের ছেলেদের দেখে মনে হয়েছিল এখানে কিছু বীরপুরুষ আছে। কিন্তু সম্পূর্ণ অনুষ্ঠান জুড়েই মেয়েদের আধিপত্য ছিল। জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সময় যেখানে ১৫জন মেয়ে ছিল, সেখানে ছেলে মাত্র ৫ জন। এমনকি নৃত্য পরিচালনায় কোন ছেলেকে এখানে দেখলাম না। উল্টো মেয়েরা ছেলে সেজে নৃত্য পরিবেশন করলো। তাহলে কী দেশে ছেলেদের সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে।
এসময় কলেজের শিক্ষার্থীরা সাংসদের কাছে বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরলে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের আমি খুব সম্মান করি। কেন না এখানে যারা উপস্থিত আছে, ভবিষ্যতে এদের মধ্য থেকে অনেকেই দেশের অনেক গুরু দায়িত্ব পালন করবে। তাই এদের সামনে আমি কখনো চাপাবাজি বা মিথ্যা আশ্বাস দিতে পারব না। কলেজের পক্ষ থেকে যে দাবীগুলো রয়েছে, কলেজের ভবন নির্মাণের সাথে সাথে তার অধিকাংশ দাবিই পূরণ হয়ে যাবে। সবচেয়ে যে বড় দাবিটি ছিল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় করা, আমি চেষ্টা করব সেটা যাতে করা যায়। এছাড়াও কলেজের আয়তন বাড়ানোর প্রসঙ্গে আমি জেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা করব।
শিক্ষার্থীরা কলেজের সামনের অবৈধ দোকান উচ্ছেদের বিষয়ে তার কাছে অভিযোগ করলে তিনি সিটি মেয়রের উদ্দেশ্যে বলেন, নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল এবং কলেজের সামনে ফুটপাতের উপড় যে দোকান গুলো রয়েছে, এতে করে শিক্ষার্থীদের কলেজে আসতে অসুবিধা হয়। তাই আমি মেয়রের প্রতি অনুরোধ রাখবো, আপনি এই অবৈধ স্থাপনা গুলো উচ্ছেদের বিষয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে আলোচনা করেন। নইলে কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমি নিজেই এগুলো উচ্ছেদে মাঠে নামবো।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নাসরিন ওসমান বলেন, এর পূর্বে এমন একটি অনুষ্ঠানে আমি যখন এসেছিলাম, তখন কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বাস এবং কর্মকর্তাদের জন্য একটি মাইক্রোবাসের ব্যবস্থাকরণে সংসদ সদস্য’র প্রতি আপনাদের দাবি ছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেন সেটা পূরণ হয়নি তা আমি জানিনা। আশা করি ওনি (সেলিম ওসমান) তার বক্তব্যের মধ্যে এ দাবি গুলো সম্পর্কে কিছু বলবেন।
এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা ভালো করে লেখাপড়া কর। মানুষের মত মানুষ হয়ে কলেজের মুখ এবং দেশের মুখ উজ্জ্বল কর।
সভাপতির বক্তব্যে আবু হাসনাত মোঃ শহীদ বাদল বলেন, নারায়ণগঞ্জ কলেজের জন্য আমাদের চাওয়ার কিছুই নেই। কেননা আমাদের প্রিয় নেতার সঙ্গীনি আমাদের ভাবি কলেজের জন্য অনেক ভাবেন। আশা করি তিনিই আমাদের কলেজের সমস্যাগুলো উপলব্ধি করে তা সমাধানের জন্য এমপি সেলিম ওসমানের সহযোগীতা কামনা করবেন।
কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য ও শিক্ষক এস এম আরিফ মিহির এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিকেএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ্ নিজাম, জেলা মহিলা লীগের সভানেত্রী প্রফেসর ড. শিরিন বেগম, জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্ঠান ঐক্য পরিষদের সভাপতি গোপীনাথ দাস, কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মেজবাউর রহমান, এনসিসি’র কাউন্সিলর শারমিনা হাবিব বিন্নি, কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য এ এম মোস্তফা কামাল, নাজমুল হাসান ভূঞা, বাসুদেব চক্রবর্তী প্রমুখ।
Leave a Reply